নতুন পোস্ট

6/recent/ticker-posts

হযরত ওসমান গণি (রাঃ) এর সংক্ষিপ্ত জীবনী বাংলা



হযরত ওসমান গণি (রাঃ)  জীবনী 

ইসলামের তৃতীয় খলিফা হযরত ওসমান ইবনে আফফান রাদি আল্লাহু আনহু জন্ম গ্রহণ করেন মক্কা নগরীতে। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দুই কন্যাকে বিবাহ করার সম্মান লাভ করায় তিনি অভিহিত হন জুননুরাইন বলে। কুরাইশ বংশের বনু উমাইয়া গােত্রে তার জন্ম এবং পৈতৃক দিকে রাসূলুল্লাহর পঞ্চম পূর্ব পুরুষের সাথে তার বংশ মিলিত হয়েছে। বনি হাশিম গােত্রের পরই আরবে রাজনৈতিক গুরুত্ব বনু উমাইয়া গােত্রের এবং ইসলামের আবির্ভাবের পূর্বে কুরাইশ বংশের নিশানবরদার বা পতাকা রক্ষার দায়িত্বে ন্যস্ত ছিল তার গােত্র ।

ইসলামের প্রথম খলিফা হযরত আবু বকর রাদি আল্লাহু আনহু তার অত্যন্ত ঘনিষ্ট বন্ধু ছিলেন। হযরত আবু বকর রাদি আল্লাহু আনহুই প্রথম ব্যক্তি যিনি হযরত ওসমান রাদি আল্লাহু আনহর কাছে ইসলামের বাণী পৌছান। হযরত ওসমান রাদি আল্লাহু আনহু এবং হযরত তালহা ইবনে আবদুল্লাহ রাদি আল্লাহু আনহু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে ইসলাম গ্রহণ করেন।

মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নির্দেশে হযরত ওসমান রাদি আল্লাহু আনহু অন্যান্য মুসলমানদের সাথে আবিসিনিয়ায় হিজরত করেন। হযরত আবু বকর রাদি আল্লাহু আনহু ছাড়া একমাত্র তিনিই ইসলামের প্রাথমিক সময়ে আর্থিক সাহায্য করেন। নিজের ব্যবসায়িক স্বার্থ বিসর্জন দিয়ে তিনি আন্তরিকভাবে ইসলামের সেবায় আত্মনিয়ােগ করেন। 

তখন মদিনায় একটি মাত্র পানির কূপ ছিল, যার মালিক ছিল অমুসলিমরা। তারা পানির জন্য মুসলমানদের উপর অধিক পরিমানে কর ধার্য করেছিল। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম চাইলেন যে, কোন মুসলিম কূপটি ক্রয় করুক। হযরত ওসমান রাদি আল্লাহু আনহু সাথে সাথে এগিয়ে এলেন এবং ৩০ হাজার দিরহাম মূল্যে কূপটি ক্রয় করে জনগণের সম্পত্তিতে পরিণত করলেন ।

হযরত আবু বকর ও হযরত ওমর রাদি আল্লাহু আনহুমার খেলাফতের সময় তিনি উচ্চপদে আসীন ছিলেন। অভ্যন্তরীণ পরামর্শ পরিষদের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ছিলেন তিনি এবং সকল গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয় বিষয়ে তার মতামত গ্রহণ করা হতাে। যে পরিস্থিতিতে ইসলামের তৃতীয় খলিফা হিসেবে হযরত ওসমান নির্বাচিত হন তা বিতর্কিত এবং এ ব্যাপারে বিভিন্ন ঐতিহাসিক তথ্যের মধ্যে একটির সাথে অপরটির দুস্তর পার্থক্য বিদ্যমান। 

কিন্তু সন্দেহাতীতভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে যে, হযরত ওমর রাদি আল্লাহু আনহু তার ইন্তেকালের পূর্বে ছয় ব্যক্তিকে মনােনীত করে যান, যাদের মধ্য থেকে একজন খলিফা হিসেবে নির্বাচিত হবেন। মনােনীতদের মধ্য থেকে চারজন তাদের নাম প্রত্যাহার করে নেয়ার পর অবশিষ্ট ছিলেন হযরত ওসমান ও হযরত আলী রাদি আল্লাহুু আনহু। দু'জনই হযরত আব্দুর রহমান বিন আউফের রায় নেমে নেয়ার ব্যাপারে সম্মতি দিলেন। 

তিনি হযরত ওসমান রাদি আল্লাহু আনহুর পক্ষে রায় ঘােষণা করার পর ওসমান রাদি আল্লাহু আনহু ইসলামের তৃতীয় খলিফা হন। হযরত ওসমান রাদি আল্লাহু আনহুর খেলাফতের প্রথম ছয় বছর ইসলামী ভূখণ্ড আরাে সম্প্রসারিত হয়। অন্যান্য ক্ষেত্রেও ব্যাপক উন্নতি সাধিত হয়। তৃতীয় খলিফা নির্বাচনের ছয় মাস পরই পারসিকরা ইসলামের কর্তৃত্বের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘােষণা করে। পারস্যের সাবেক এক সম্রাট যে নির্বাসিত জীবন কাটাচ্ছিলেন সে এই বিদ্রোহের উঙ্কানি দিচ্ছিলাে এবং সর্বত্র তার গুপ্তচরেরা তৎপর ছিল। 

হযরত ওসমান রাদি আল্লাহু আনহু অত্যন্ত দ্রুততার সাথে কঠোর হাতে পরিস্থিতি মােকাবেলা করেন। বিদ্রোহ দমনে তিনি সেনাবাহিনী নিয়ােগ করেন এবং গােলযােগ সৃষ্টিকারীদের পারস্যের সীমান্ত পর্যন্ত তাড়িয়ে দেন। এই অভিযানে কিছু নতুন এলাকা মুসলিম সাম্রাজ্যের সাথে যুক্ত হয়। হিজরী ৩০ সনের মধ্যে পারস্যের উত্তর ও পূর্বদিকে খােরাসান, তুস নগরী, নিশাপুর এবং মার্ভ মুসলিম সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত হয়।

খেলাফতের দ্বিতীয় বছরে রােমানরা এশিয়া মাইনর হয়ে সিরিয়ায় প্রবেশ করে । সিরিয়ার গভর্নর আমীর মুয়াবিয়া রাদি আল্লাহু আনহুর নেতৃত্বাধীন মুসলিম বাহিনীর সৈন্যদল প্রতিপক্ষের সৈন্যসংখ্যার চাইতে অনেক কম ছিল। কিন্তু নতুন করে শক্তি বৃদ্ধির ফলে মুসলমানরা রােমানদেরকে কৃঞ্চসাগরের উপকূল পর্যন্ত ধাওয়া করতে সক্ষম হয়। আর্মেনিয়া, আজারবাইজান, এশিয়া মাইনর মুসলমানদের হাতে এলো। কৃষ্ণ সাগরের তীরবর্তী তিফলিসও দখল করা হলাে। 

হিজরী ৩২ সনে আমীর মুয়াবিয়া রাদি আল্লাহু আনহু কন্সটান্টিনােপল অবরােধ করলেন। রােমানদের হামলা প্রতিহত করার জন্য সীমান্তে শক্তিশালী দুর্গ নির্মাণ করা হলাে। মুসলিম ভুখন্ড দখল করার জন্য মিশর ও পশ্চিম আফ্রিকায় অবস্থিত রােমানরা পরিকল্পনা আঁটছিল। হিজরী ২৫ সনে তারা আলেকজান্দ্রিয়া দখল করে নেয়। কিন্তু সেনাপতি আমর ইবনে আল আস তা পুনর্দখল করেন। 

সেনাপতি গ্রেগরীর অধীনে এক লাখ বিশ হাজার সৈন্য পার্শ্ববর্তী মুসলিম দেশগুলাের জন্য অব্যাহত বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। এই শক্তিকে মােকাবেলার উদ্দেশ্যে মদীনা থেকে একটি শক্তিশালী বাহিনী প্রেরণ করা হলাে, যার মধ্যে হযরত আবদুল্লাহ ইবেন জুবায়ের রাদি আল্লাহু আনহুর মতাে বিখ্যাত বীরও ছিলেন। রােমানরা যুদ্ধে প্রচন্ড প্রতিরােধ গড়ে তুলেছিলাে। 

কিন্তু শেষ পর্যন্ত হযরত আবদুল্লাহ ইবনে জুবায়ের রাদি আল্লাহু আনহুর হাতে তাদের সেনাপতির পতনে রােমান প্রতিরােধ ভেঙ্গে পড়ে এবং রােমানরা বিপুল ক্ষয়ক্ষতি স্বীকার করে পরাজিত হয়। হযরত ওসমান রাদি আল্লাহু আনহুর সময়েই মুসলমানরা সর্বপ্রথম নৌ-যুদ্ধের অভিজ্ঞতা অর্জন করে। এর আগে সাইপ্রাস আক্রমণ করার ব্যাপারে আমীর মুয়াবিয়া রাদি আল্লাহু আনহুর উদ্যোগকে খলিফা বাধা দিয়েছিলেন। 

সিরিয়ার পাশে এটি রােমনদের একটি শক্তিশালী ঘাটি এবং সিরিয়ার জন্য স্থায়ী হুমকিস্বরূপ। এই কৌশলগত দ্বীপ থেকে রােমানরা সিরিয়ার উপকূলে নিয়মিত হামলা চালাত। হযরত ওসমান রাদি আল্লাহু আনহু সুনির্দিষ্ট শর্তসাপেক্ষে দ্বীপটি আক্রমাণের জন্য মুয়াবিয়াকে অনুমতি দিলেন। মুয়াবিয়া একটি শক্তিশালী নৌবহর গড়ে তুললেন, যা ছিল ইসলামের ইতিহাসে প্রথম নৌ-বহর।

হিজরী ৩১ সনে রােমানরা পাঁচশত জাহাজ নিয়ে মিশরে আক্রমণ চালালাে। মিশরের মুসলিম গভর্নর ক্ষুদ্র নৌ-বহর দিয়ে রােমানদের মােকাবেলা করলেন। তিনি একটির সাথে আরেকটি জাহাজ বেঁধে নিয়েছিলেন এবং হাতাহাতি যুদ্ধে রােমানদের পরাস্ত করেন। এই বিজয়ে ভূমধ্যসাগরের পূর্বাঞ্চলে মুসলিম নৌ-বাহিনী শ্রেষ্ঠ বাহিনী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়।

হযরত ওসমান রাদি আল্লাহু আনহুর খেলাফতের প্রথম বছর প্রশাসন তার পূর্বসূরীদের কার্যকারিতা হারায়নি এবং জাতিগঠন প্রক্রিয়া পূর্বের মতই অব্যাহত ছিল। তিনি পারস্যের বিদ্রোহ কঠোর হাতে দমন করেন। রাষ্ট্রের সীমানা সম্প্রসারিত হয় এবং সাফল্যের সাথে নৌ-যুদ্ধ-কৌশল গ্রহণ করা হয়। মুসলমানরা যে চেতনা ও উদ্যমে ইসলামের দ্বিতীয় খলিফার আমলে ইসলামী ২ খন্ডের বিস্তৃতি ঘটিয়েছিল তাও ওসমানের আমলে বিলুপ্ত হয়নি। 

কিন্তু মানসিক সংঘাত বজায় রেখে যেসব খ্রিস্টান ও ইহুদী ইসলাম গ্রহণ করেছিল তারা ইসলামে অনুমােদিত গণতান্ত্রিক নীতিমালার সুযােগ নিয়ে বিভিন্ন বিষয়ে আরােপিত ইসলামী বিধিনিষেধের বিরােধিতা করতে শুরু করে। তারা ইবনে সাবাকে তাদের নেতা হিসেবে পায়। 

ইয়েমেনের এক ইহুদী ইসলাম গ্রহণ করেছিল। বসরা, কুফা, ও ফুসতাত এ বসবাসরত হেজাজের বাইরের আরবরা ইবনে সাবা ও তার কুচক্রী অনুসারীদের গােপন চক্রান্তের সহজ শিকারে পরিণত হয়। ইবনে সাবা ইরাক, মিশর, কুফা, বসরা ও ফুসতাত এ ষড়যন্ত্রের জাল বিস্তার করে খলিফার বিরুদ্ধে তৎপরতা চালায়।

খলিফা ওসমান রাদি আল্লাহু আনহুর বিরুদ্ধবাদীরা তার বিরুদ্ধে স্বজনপ্রীতি, আনুকুল্য প্রদর্শন ও অংশীদারিত্বের অভিযােগ উত্থাপন করে। কিন্তু তিনি তার খেলাফতের ছয় বছরে পুরনাে ধারাবাহিকতার কোন ব্যতিক্রম ঘটাননি। নিরপেক্ষ বিচার নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে মানুষের পক্ষে যত কঠোরতা অবলম্বন করা সম্ভব হযরত ওসমান রাদি আল্লাহু আনহু তাই করেছেন। একজন প্রাদেশিক গভর্নর মদ্যপানের জন্য অভিযুক্ত হলে বিধি অনুযায়ী তাকে প্রয়ােজনীয় সংখ্যক বেত্রাঘাত করা হয়। 

তিনি উমাইয়া গােত্রের বেশ কিছুসংখ্যক গভর্নরকে তাদের বিরুদ্ধে অভিযােগ প্রমাণিত হওয়ায় বরখাস্ত করেন। তাছাড়া তিনি যে কয়জন উমাইয়া গভর্নর নিযুক্ত করেছিলেন তারা প্রশাসনে দক্ষতা দেখিয়ে তাদের নিয়ােগের যথার্থতা প্রমাণ করেন। হযরত ওসমান রাদি আল্লাহু আনহু তাঁর রাজনৈতিক বিচক্ষণতার পরিচয় দিয়ে প্রশাসনে এমন লােকদের নিয়ােগ করেছিলেন যারা গতিশীল ও যােগ্য।

খলিফা হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার পূর্বে হযরত ওসমান রাদি আল্লাহু আনহু ইসলামের খেদমতে বিপুল আর্থিক সহায়দা দান করেন। তার সমুদয় সম্পত্তি দিয়ে দেন মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে। তার উদারতার কোন সীমা পরিসীমা ছিল না। খলিফা হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার পর তিনি বায়তুল মাল হতে কোন ভাতা গ্রহণ করেননি। বরং নিজের ব্যবসালব্ধ অর্থ দিয়ে জনগণের সেবা করেছেন।

 বিখ্যাত ইতিহাসবিদ তাবারী হযরত ওসমান রাদি আল্লাহু আনহুর আকেটি ভাষণের উদ্ধতি দিয়েছেন যাতে খলিফা বলেছেন, "যখন আমাকে খেলাফতের দায়িত্ প্রদান  করা হয় তখন আমি ছিলাম আরবে উট ও বকরীর সবচেয়ে বড় মালিক। এখন কোন উট বা বকরী নেই। আল্লাহ সাক্ষী, আমি কোন নগরীকে তার সামর্থ্যের অধিক করারােপ করিনি, কারণএর ফলে আমাকে দোষারূপ করা হতে পারতাে। 

জনগণের নিকট হতে আমি যা আদায় করেছিতা তাদের কল্যাণের জন্যেই ব্যয় করেছি। আদায়কৃত অর্থের এক পঞ্চমাংশ বায়তুল মালে জমাহতাে। তা থেকেও ব্যক্তিগত প্রয়ােজনে আমি কিছুই নেইনি। যারা এই অর্থের মূল হকদার তাদেরজন্যেই তা ব্যয় হতাে। আমার দ্বারা নয়, মুসলমানদের জন্যই ব্যয় হয়েছে এবং জনগণের তহবিলের এক কানাকড়িও অপচয় হয়নি। বায়তুর মাল হতে আমি কখনও কিছুই গ্রহণ করি না। 

ওসমান রাদি আল্লাহু আনহুর আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ অবদান হচ্ছে পবিত্র কোরআন সংকলন। তার খেলাফতের সময়েই বিভিন্ন জাতির লােকদের দ্বারা অধ্যুসিত অপ্রত্যন্ত অঞ্চলে ইসলাম বিস্তৃত হয়। আরবের বিভিন্ন এলাকায় আরবি উচ্চারণ ও পঠনের বিভিন্নতার কারণে কোরআন পাঠেও বৈচিত্র দেখা দেয়। এ অবস্থায় ওসমান রাদি আল্লাহু আনহু উপলব্ধি করেন যে, একটি নির্দিষ্ট মানসম্মত কোরআন সংকলন করা অত্যন্ত জরুরী। এর ফলে সর্বত্র কোরআনের আয়াত উচ্চারণে অভিন্নতা আসবে। আবু বকর রাদি আল্লাহু আনহু প্রথমে কোরআন সংকলন করেছিলেন নির্ভরযােগ্য সূত্রের সাহায্য নিয়ে। 

সেটি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের স্ত্রীর কাছে ছিল। ওসমান রাদি আল্লাহু আনহু সাহাবাদের সাথে পরামর্শক্রমে সেটির বেশ কয়েকটি কপি করালেন। তিনি সেগুলােকে ইসলামী রাষ্ট্রের বিভিন্ন স্থানে প্রেরণ করলেন। তখন পর্যন্ত বিরাজিত কোরআনের অপ্রামান্য কপিগুলাে পুড়িয়ে ফেলা হলাে। এই পদক্ষেপ নেয়া হয়েছিল মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বিজয় সাহাবাদের সম্মতিক্রমে।

ওসমান রাদি আল্লাহু আনহু ছিলেন অত্যন্ত সহজ-সরল এবং দয়ালু। তার চরিত্র ছিল সন্দেহের উর্ধে। তার শত্রুও তার নিষ্ঠায় সন্দেহ পােষণ করেনি। কিন্তু কিছুসংখ্যক লােক তার সরলতার সুযােগ নিয়েছে। তিনি যে পদক্ষেপই নিয়েছেন সবই ছিল তার সদিচ্ছা-প্রসূত। ইসলামের শক্রারা যারা ইসলামের অগ্রযাত্রায় ঈর্ষান্বিত হয়ে পড়েছিল এবং ইসলামী রাষ্ট্রের ভিত্তিকে দুর্বল করার চেষ্টায় মেতেছিল। তাদের চক্রান্ত ও অপচেষ্টা ফলপ্রসূ হতে পারেনি। 

একবার দুস্কৃতিকারীরা ইসলামের রাজধানী মদিনার বাসিন্দাদের অবরােধ করলাে। নগরবাসী তাদের জীবনের বিনিময়ে হলেও খলিফাকে রক্ষা করতে প্রস্তুত ছিল। কিন্তু তাদের উদ্যোগকে ঠেকানাে হলাে এই যুক্তিতে যে, এর ফলে অহেতুক মুসলিম রক্তক্ষয় হবে। হযরত আলী রাদি আল্লাহু আনহু তার দুই পুত্রকে খলিফার বাড়িতে প্রহরী হিসেবে নিয়ােগ করেন, যাতে তারা নিজেদের জীবন দিয়েও খলিফা ও তার পরিবারের সদস্যদের রক্ষা করে। 

খলিফা বিদ্রোহীদের একটি দাবি মেনে নিয়ে মুহাম্মদ বিন আবু বকরকে মিশরের গভর্নর নিয়ােগ করলেন। এই কার্যব্যবস্থায় বিদ্রোহীরা দৃশ্যতঃ সন্তুষ্ট হয়ে অবরােধ প্রত্যাহার করে নিলো এবং মনে হলাে ঝড়ের যে কালাে মেঘ মদিনার উপর হুমকি হয়ে পঁড়িয়েছিল তা দূরীভূত হলাে। কিন্তু অল্পদিন পরই বিদ্রোহীরা পুনরায় মদিনা অবরােধ করলাে। 

খোঁজ নিয়ে জানা গেল, খলিফার একটি গােপন চিঠি তাদের হাতে পড়েছে। যে চিঠিতে খলিফা মিসরের গভর্নরকে নির্দেশ দিয়েছেন মুহাম্মদ আবু বকর সেখানে পৌছামাত্র তাকে হত্যা করার জন্য। যে দূত চিঠি নিয়ে যাচ্ছিল বলে অভিযোগ করা হলাে তাকে তারা উপস্থিত করতে পারলাে না। খলিফা এ ধরনের কোন চিঠি প্রেরণের দায়িত্ব অস্বীকার করলেন। 

বিদ্রোহীরাও খলিফার কথা মেনে নিলাে। কিন্তু সচিব মারওয়ানকে এই চিঠি জাল করার জন্য দায়ী করলাে। তারা মারওয়ানকে তাদের হাতে অর্পণের জন্য দাবি জানালে খলিফা কোন প্রমাণ ছাড়া তাকে এভাবে অর্পণ করতে অস্বীকার করলেন। বিদ্রোহীরা এ সম্পর্কে হযরত আলী রাদি আল্লাহু আনহুর প্রশ্নের সন্তোষজনক জবাব দিতে পারলাে না।

অতঃপর খলিফা ওসমান রাদি আল্লাহু আনহু বিদ্রোহীদের উদ্দেশ্যে তার ভাষণে উল্লেখ করলেন, আমি মৃত্যুভয়ে ভীত নই, বরং মৃত্যুকে আমি সবচেয়ে সহজ বিষয় মনে করি। যুদ্ধ সম্পর্কে বলতে হয়, আমি যদি যুদ্ধ চাই, তাহলে হাজার হাজার লােক আমার পক্ষে লড়তে এগিয়ে আসবে। কিন্তু আমি এক বিন্দু মুসলিম রক্তপাতের কারণ হতে পারি না।

চরম সংকটক্ষণ উপস্থিত হলাে। মদীনার বিপুল সংখ্যক অধিবাসী হজ্ব পালন করতে মক্কায় চলে গেছে। দুস্কৃতিকারীরা এটাকে তাদের চক্রান্ত বাস্তবায়নের উপযুক্ত সময় বলে বিবেচিত করলাে। খলিফার বাসভবনের উপর ঝাপিয়ে পড়লাে তারা। 

যেহেতু প্রবেশদ্বারে হযরত আলী রাদি আল্লাহু আনহুর দুই অসম সাহসী বীর পুত্র প্রহরায় নিযুক্ত ছিল, সেজনযে দুস্কৃতিকারীরা পিছনের প্রাচীর টপকে ভিতরে প্রবেশ করে কোরআন তেলাওয়াতরত অবস্থায় বয়ােবৃদ্ধ খলিফাকে শহীদ করে দিল। তাকে রক্ষার জন্য তাঁর স্ত্রী হাত তুলে ধরায় দুষ্কৃতিকারীদের আঘাতে তার হাতের আঙ্গুল কেটে গেল। ৬৫৬ সালের ১৭ই জুনখলিফা হযরত ওসমান রাদি আল্লাহু আনহু ৮২ বছর বয়সে শাহাদাত বরণ করেন।

আরও পড়ুন 

 হযরত ওমর ফারুক (রা.) জীবনী

*  হযরত আলী রাদি আল্লাহু আনহুর  জীবনী 

* হযরত আবু বকর সিদ্দীক (রা.) জীবনী

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ