নতুন পোস্ট

6/recent/ticker-posts

বিখ্যাত মনীষী হযরত ফোজায়েল ইবনে আয়াজ (রাঃ) এর জীবনী বাংলা

বিখ্যাত মনীষী হযরত ফোজায়েল ইবনে আয়াজ (রাঃ)

বিখ্যাত মনীষী হযরত ফোজায়েল ইবনে আয়াজ (রাঃ) প্রথম জীবনে তিনি দস্যুদের সরদার ছিল। তার কথা মতো দস্যুদল মানুষের ওপর যাপিয়ে পরত এবং লুটপাট করে সব কিছু নিয়ে যেত।     

বিশাল বালুময় প্রান্তর। আরব মরুভূমি। মরুপথে চলেছে এক বাণিজ্য-কাফেলা। খুব সাবধানে, সর্তক হয়ে। কখন কাফেলার ওপর দস্যুদল হানা দেয়। বাণিজ্যেযাত্রীরা প্রতি মুহুর্তে সজাগ- সচেতন।

হঠাৎ দস্যুকণ্ঠ ভেসে এল মরুর বাতাসে। উপায় নেই। লুঠেরার দল ঝাঁপিয়ে পড়ল বলে। এক বণিকের সঙ্গে আছে অনেক টাকাকড়ি। দস্যুদের হাতে পড়লে সব যাবে। তাই সে চঞ্চল হয়ে উঠল। কোথাও যদি টাকাগুলি লুকিয়ে ফেলা যায়, তাহলে খুব ভালাে হয়। ব্যস্ত হয়ে সে এদিকে- এদিকে ছুটে বেড়ায়। আর নজরে পড়ে একটি তাঁবু। এস্ত পায়ে সে এগিয়ে গেল তাঁবুর দিকে। দেখল, একটি লােক নিবিষ্টচিত্তে নামায পড়ছেন, তাঁর পরনে চটের পােশাক। 

মাথায় পশমী টুপি। গলায় বিশাল জপমালা। তাঁবুর ভেতরে উকি মেরে সে দেখে, নামায শেষে এখন তিনি তসবীহ পাঠ করছেন। খুশিতে ভরে উঠল তার মন। ঠিক জায়গায় সে এসেছে। উপযুক্ত লােক খুঁজে পেয়েছে। এ দরবেশের কাছেই দিব্যি সে তার টাকাকড়ি লুকিয়ে রাখতে পারে। অতএব সে ঢুকে পড়ে তাবুর ভেতর। আর টাকাগুলি লুকিয়ে রাখার জন্য দরবেশকে অনুরােধ জানায়। তিনি তাকে টাকা রাখার জন্য একটি জায়গা দেখিয়ে দিলেন।

কিছুক্ষণ পর। লুঠতরাজ শেষ। বাণিজ্যযাত্রীদের সর্বস্ত লুট করে দস্যুরা উধাও ঐ বণিক এবার তার টাকা ফিরিয়ে নেবার জন্য আবার তাঁবুতে আসে। আর এসে যা দেখে, তাতে তার প্রাণ উড়ে যায়। এবার দরবেশ আর একা নন। লুষ্ঠিত মালের ভাগ-বাটোয়ারা করছে। তার বুঝতে দেরি হল না যে, যার জিম্মায় সে টাকা রেখে গিয়েছে, আসলে সে এক দস্যু। দরবেশ সেজে ডাকাতদলের নেতৃত্ব দেয়। তার অনুশােচনার আর অন্ত রইল না। কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে সে এসব কথা ভাবছে, হঠাৎ দস্যুসর্দার তাকে দেখে ফেললেন। বললেন, তুমি এখানে কিজন্য এসেছ?

সে সাহসভরে বলল আমি আপনার হেফাজতে টাকা রেখেছিলাম। সেগুলাে নিতে এসেছি। নিয়ে যাও, খুব সহজভাবে বললেন তিনি। বণিক যেখানে টাকা রেখেছিল, সেখান থেকে সব টাকা তুলে নিয়ে চলে গেল। কিন্তু বড় ধাঁধায় পড়ে গেল বেচারা।

দলে অন্য দস্যুরা এ টাকা ফিরিয়ে দিতে রাজি হয়নি। কিন্তু দরবেশরূপী দস্যু-সর্দার বলেছিলেন, আমার প্রতি লােকটার ধারণা ভালাে ছিল। আমাকে নির্ভরশীল বলে সে মনে করেছিল। যেমন আল্লাহর প্রতি আমি ভালাে ধারণা পােষণ করি ও তাঁকে নির্ভরশীল বলে জানি। তার সেই ভালাে ধারণাকে আমি সত্যে পরিণত করলাম। আশা করি, আল্লাহ অনুগ্রহ করে আমার ভালাে ধারণাকে সত্যে পরিণত করবেন।

পথে যেতে যেতে দরবেশের কথাগুলি তার বারবার মনে পড়তে লাগল। এও কি সম্ভব? অথচ শুধু সম্ভব নয়, নিরঙ্কশভাবে সত্য।

এরপর আরও একটি বাণিজ্য-কাফেলা লুষ্ঠিত হল। কাফেলার একটি লােক এক লুঠোরাকে শুধাল, তােমাদের কি সর্দার নেই।

আছে।

সে এখন কোথায়? তিনি এখন নদীতীরে নামায পড়ছেন।

এখন তাে নামাযের সময় নয়।

উনি নফল নামায পড়ছেন। তিনি খানাপিনা করেন কখন?

উনি দিনে রােযা রাখেন।

এখন তাে রমযান নয়।

তা নয়। উনি নফল রােযা রাখেন।

দলপতির কাছে তাকে নিয়ে গেলে সে জিজ্ঞেস করে, আপনার নামায-রােযা ও দস্যুবৃক্তির সঙ্গে সঙ্গতি কোথায়? তিনি বললেন, আল্লাহর কুরআন পড়ছে? সেখানে একটি আয়াতে সুস্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, দ্বিতীয় দল নিজেদের পাপসমূহকে স্বীকার করল এবং পুন্য কাজগুলিকে তার সঙ্গে মিশিয়ে দিল। দস্যু-প্রধানের কথাবার্তা শুনে বণিক অবাক হয়ে গেল।

অবাক হওয়ার কথাই বটে। অন্তরে আল্লাহর প্রতি অপরিমেয় অনুরক্তি। অথচ বাইরে দুর্ধর্ষ দস্যুবৃত্তি। একাধারে দরবেশ ও দস্যু।

এ বিসময়কর ব্যক্তিত্বটি হল ফোজায়েল ইবনে আয়াজ (র) সেকালের এক সুবিখ্যাত সিদ্ধপুরুষ। সফলকাম সাধক। লঠেরা দলের দলনেতা হিসেবে ও তাঁর কিছু বৈশিষ্ট্য ছিল কাফেলায় স্ত্রীলােক থাকলে তার ওপর হামলা না করার নির্দেশ ছিল তার। কারও কাছে অয়-স্বল্প টাকা থাকলে তা লুঠ করা হতাে না বা লুণ্ঠিত মালপত্রের একটা অংশ কাফেলা যাত্রীদের ফিরিয়ে দেওয়া হতাে। 

প্রথম জীবনে তিনি এক নারীর প্রেমে পড়েন। লুঠপাট করে যা কিছু পেতেন, তা সবই দিয়ে দিতেন তাকে। আবার মাঝে মাঝে তার কাছে গিয়ে কান্নাকাটিও করতেন। এক বিচিত্র চরিত্রের মানুষ। আল্লাহ পাকের অনুপম ইচ্ছায় একদিন আচমকা পরিবর্তন এ তাঁর মন- মানসিকতায়, চিন্তা-ভাবনায়।

এক রাতে তিনি তাঁর তাবু থেকে শুনতে পেলেন এক কাফেলাযাত্রীর কুরআন-আবৃত্তি: এখনও কি আল্লাহর স্মরণ দ্বারা ঈমানদারদের হৃদয়সমূহকে ভীত ও জাগরিত করার সময় আসেনি? আয়াতটি শুনে অন্তরাত্মা কেঁপে উঠল ফোকায়েল ইবনে আয়াজ (র)-এর। বুকের তলায় বসে কে যেন বলে উঠল রে দুরাত্মা, এভাবে আর কতদিন লুঠপাট চালিয়ে যাবি? ঢের হয়েছে, আর নয়। এবার তওবা করার সময় হয়েছে। কেননা, তাের পাপ এখন সীমা অতিক্রম করেছে।

অন্তরের এ আহ্বান আর তিরস্কার বৃথা গেল না। আলাের জন্য তিনি আকুল হয়ে উঠলেন। সঙ্গে সঙ্গে মনে মনে তওবা করে চেতনার আলােয় উদ্ভাসিত হলেন।

তার এই পরিবর্তন কতখানি সচল, কিছুক্ষণ পরেই তা বােঝা গেল। ঐ পথে আর ওএকদল বণিক এসে পড়ল। তাঁবুতে বসে তিনি তাদের ও কথাবার্তা শুনতে পেলেন। ভীত-সন্ত্রস্ত লােকগুলি বলাবলি করছে, এ পথে আসা মােটেই ঠিক হয়নি। কেননা, এ পথেই ইবনে আয়াজের তাঁবু আছে। কথাগুলি কানে আসামাত্র তিনি তাদের উদ্দেশে বললেন, হে বণিক দল, তোমরা ভয় পেয়াে না। তােমাদের জন্য সুখবর। দস্যু-নেতা ফোজায়েলের জীবনধারা বদলে গেছে সে তওবা করেছে। এখন তােমাদের কাছ থেকে সে নিজেই চলে যাচ্ছে।

দেখা গেল, সত্যিই আকুল ক্রন্দনে উচ্চসিত হয়ে তিনি দৌড় শুরু করলেন বণিক দল বুঝল যার ভয়ে তারা ভীত, তিনি আপ নিজেই ভীত হয়ে দস্যু-জীবনের অন্তরালে চলে গেলেন।

পথে একটি লােকের সঙ্গে তাঁর দেখা হল। তিনি তাঁকে খলিফার কাছে নিয়ে যাবার অনুরােধ করলেন। সে তাকে নিয়ে গেল খলিফার দরবারে। খলিফা তার প্রতি খুবই ক্রদ্ধ ছিলেন। কোনদিন তাকে ধরতে পারলে চরম শাস্তি দেবেন এমন সঙ্কল্প ও সে নয়। এ এক অন্য মানুষ। আমূল পরিবর্তন হয়েছে তাঁর। সুতরাং হাতের মুঠোয় পেয়ে ও তিনি তাকে ছেড়ে দিলেন। ফিরে যেতে বললেন নিজের দেশে। 

নিজের দেশেই ফিরে এলেন ফোজয়েল ইবনে আয়াজ (র) একদিন তাঁর আত্মীয়জনেরা বাড়ির দরজায় একটি অস্ফুট ভাঙা স্বর শুনল। সে স্বর পরিচিত কিন্তু অমন বিকৃত কেন? নিশ্চয়ই আহত হয়ে বাড়ি ফিরছে। দ্রুত বাড়ির বাইরে এসে তারা জিজ্ঞেস করে, কোথায় আঘাত লাগল আপনার তিনি বললেন হা, আঘাত লেগেছে। তবে সেটা শরীরে নয়, মনে। তাঁর মানসিক পরিবর্তন ধরা পড়ল একটু পরেই । বাড়িতে ঢুকে তিনি তার স্ত্রীকে বললেন, আমি মক্কা যেতে চাই। 

এ বিষয়ে তােমার মতাে কি স্ত্রী বললেন, আমার নিজস্ব কোন মত নেই। আমি আপনার থেকে বিচ্ছিন্ন হতে চাই না। আপনি যেখানে যাবেন, আমিও সেখানে যাব। আপনার সেবা-পরিচর্যাই আমার কাম্য। স্ত্রীকে নিয়ে তিনি চলে গেলেন মক্কা শরীফে। আঁধার থেকে আলাের ভুবনে। আধ্যাত্মিক জীবনে। শুরু হয়ে গেল মহাজীবনের সাধনা। আর এ সাধনা বৃথা গেল না।আল্লাহর আর্শীবাদপুষ্ট হয়ে তিনি নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করলেন এক প্রধান হাদীরূপে। আর আলাের অভিসারে আকৃষ্ট হয়ে দলে দলে ছুটে আসতে লাগল অসংখ্য মানুষ।

বাগদাদ থেকে তাঁর আপনজনেরা এল তাঁকে দেখার জন্য। তিনি দেখা করলেন না। কিন্তু দেখা না করে তারাও মক্কা ছেড়ে গেল না। অবশেষে একদিন তিনি তার বাড়ির ছাদে দাঁড়িয়ে তাদের বললেন, আল্লাহ তােমাদের আলস্য আর উদাসীনতা দূর করে দিন। আল্লাহর কাছে এই আমার প্রার্থনা। তােমরা দেশে ফিরে গিয়ে তার উপাসনায় মগ্ন হও। এর বেশী আর কিছু বলতে আমি রাজি নই। অত্যন্ত হতাশ হয়ে আত্মীয়জনেরা ফিরে গেল।

ফোজায়েল ইবনে আয়াজ (র) তাঁর পূর্বকৃত অপরাধের জন্য অনুতপ্ত হয়ে প্রত্যেকের কাছে ক্ষমা ভিক্ষা চান। এক ইহুদি ছাড়া সবাই,তাকে ক্ষমা করে। ইহুদি একটি শর্ত দিয়ে বসল। সে বললাে কাছের ঐ পাহাড়গুলিকে উৎখাত করতে পারলে ফোজায়েল (র)-কে সে ক্ষমা করবে। কঠিন শর্ত। খুব বিপদে পড়লেন ফোজায়েল (র)। অবশেষে আল্লাহর নাম স্মরণ করে একদিন পাহাড়ের মাটি সরাতে শুরু করলেন। তওবাকারীকে মদত দিলেন আল্লাহ্। একদিন আচমকা এক ঘূর্ণিঝড়ে পাহাড়গুলি উড়ে গেল।

ইহুদির বিদ্বেষভাব কেটে গেল। একদিন সে চলে এল ফোজায়েল (র)-এর কাছে। বলল আমি মনে মনে সংকল্প করেছি, আমার লুষ্ঠিত মাল ফেরত না পেলে আমি কখনই ক্ষমা করব না। এখন সেই শপথের কাফফারা দেয়া উচিত। আপনি এক কাজ করুন। এ টাকার থলি আমি আপনাকে দান করছি। ঐ থেকে আমার লুণ্ঠিত দ্রব্যের বিনিময় মূল্য হিসেবে নিজের হাতে আমাকে দান করুন। তাহলে আমার কাফফারা আদায় হবে এবং আপনাকে আমি ক্ষমা করতে ও পারব।

ফোজায়েল ইবনে আয়াজ (র) তাই করলেন। কিন্তু এবার এল নতুন শর্ত। ইহুদিকে ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত করতে হবে। ফোজায়েল ইবনে আয়াজ (র) তা-ও করলেন।

ইহুদি এখন মুসলমান। এবার সে জানাল, তিনি স্বপ্নে বই পড়ে, জেনেছেন যে, প্রকৃত তওবাকারীর হাতের ছোঁয়ায় মাটি সােনা হয়ে যায়। বললেন, আমার ঐ থলের টাকাগুলি ছিল মাটির। আপনি যখন নিজের হাতে সেটি আমাকে দিলেন, তখন তা খুলে দেখি, সেগুলি সত্যিই খাটি সােনায় পরিণত হয়েছে। এখন আমার কোন সন্দেহ নেই যে, আপনাদের ইসলাম ধর্ম অবশ্যই একটি বিশুদ্ধ ধর্ম। এ ঘটনার দ্বারা প্রমাণিত হয়ে গেল যে, ফোজায়েল ইবনে আয়াজ (র) খুবই আন্তরিকভাবে তওবা করে আধ্যাত্মজীবনে প্রবেশ করেছেন। আর অনন্ত করুণাময় আল্লাহ সানন্দে তাকে তার প্রিয়জন হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছেন।

খলিফা হারুন অর রশীদ এর জ্ঞান চক্ষু খুলে গেলঃ ! 

একসময় খলিফা হারুন অর রশীদের মনােবিকলন শুরু হয়। কিছুই তার ভালাে লাগে না। মনে দারুণ অশান্তি। ফজলে বারমাকীকে ডেকে বললেন, আমাকে কোন আল্লাহর ওলীর কাছে নিয়ে চলুন। হয়তাে তাঁর কাছে গিয়ে আমি শান্তি পাব। বারমাকী তাকে নিয়ে গেলেন হযরত সুফিয়ান সওরী (র)-এর বাড়িতে। খলিফার আগমন বার্তা পেয়ে সুফিয়ান সওরী (র) বিগলিত হয়ে বললেন, তাকে তলব করলে তিনি নিজেই খলিফার দরবারে গিয়ে হাজির হতেন। 

স্বয়ং খলিফার আসার কোন প্রয়ােজন ছিল না। হারুন অর রশীদ এ কথা শুনে ফজল বারমাকীকে বলবেন, আমি যাকে চাই, ইনি সেই ব্যক্তি নয়। তখন ফজলের মনে হল, হয়তাে ফোজায়েল ইবনে আয়াজ (র)-ই তার কাঙ্ক্ষিত পুরুষ। অতএব তারা সেখানে গেলেন। ফোজায়েল ইবনে আয়াজের (র) বাড়ির দরজায় দাঁড়িয়ে দুজনে শুনলেন, ভেতরে কুরআন শরীফ পাঠ হচ্ছে। তিনি পাঠ করছেন, অপকর্মকারীরা কি মনে করে যে, আমি তাদেরকে ঈমানদার ও পূল্যবানদের মধ্যে গণ্য করব?

আয়াতটি শুনে খলিফা বলেন, উপদেশ প্রার্থী হিসেবে আমার জন্য এ আয়াতটিই যথেষ্ট। এবার দরজায় করাঘাত করা হল। ভেতর থেকে আওয়াজ এল, কে? জবাবে বলা হল, আমিরুল মুমিনীন। এখানে তার কী প্রয়ােজন? আমারই বা তাঁর কাছে কী প্রয়ােজন? আপনারা আমাকে সংসারের দিকে টেনে নেবেন না।

ফজল বারমাকী বললেন, দেশের খলিফার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা সকলেরই কর্তব্য। ফোজায়াল ইবনে আয়াজ (র) বলেন, আমাকে কেন এত জ্বালাতন করছেন? তাঁর বিরক্তি সত্ত্বেও ভেতরে ঢোকার অনুমতি চাওয়া হল। তিনি বললেন, আমি অনুমতি দিই না। তবে খলিফা যদি একান্তই ভেতরে আসতে চান, তাে সেটি তার ইচ্ছা। 

যাই হােক, খলিফা ভেতরে ঢােকা মাত্র ফোজায়েল ইবনে আয়াজ (র) ঘরের প্রদীপ নিভিয়ে দিলেন-বাদশাহ যেন তাঁর মুখ দেখতে না পান। বাদশাহ অবশ্য ঐ আঁধারেই হাত বাড়িয়ে দিলেন ফোজায়েল ইবনে আয়াজ (র)-এর দিকে। হাতে হাত মিলল। ফোজায়েল ইবনে আয়াজ (র) হায়! কী নরম হাত! এ হাত জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা পেলে হয়। বলেই তিনি নামাযে দাঁড়িয়ে গেলেন।

খলিফা হারুন অর রশীদ কান্নায় ভেঙে পড়লেন। বললেন, আমাকে কিছু বলুন। নামায শেষ করে ফোজায়েল ইবনে আয়াজ (র) বললেন, আপনার পিতামহ রাসূলুল্লাহর (র) পিতৃব্য ছিলেন। তিনি ভ্রাতুম্পুত্রের কাছে খলিফা-পদের প্রার্থনা করেন। কিন্তু রাসূলে করীম (স) বলেন, চাচাজী, আপনাকে দেশাধিপত্য না দিয়ে আপনার নিজের ওপর শাসন-কর্তৃত্ব দিলাম। 

মনে রাখবেন, হাজার বছর ধরে খলিফা হয়ে জনসেবার চেয়ে আল্লাহর ইবাদতে নিজেকে নিয়ােজিত রাখা অনেক গুণে শ্রেয়। বিচারদিবসে নেতৃত্ব লজ্জা পায়, অপদস্থতার কারণ হয়। বাদশাহ বলেন, আরও কিছু বলুন।

ফোজায়েল ইবনে আয়াজ (র) বললেন, উমর ইবনে আবদুল আজীজ খলিফাপদে উপবিষ্টি হয়ে সলীম ইবনে আবদুল্লাহ, রাওয়াহা ইবনে হাইয়্যান (র) প্রমুখ প্রজ্ঞা ব্যক্তিকে ডেকে বলেন, আমার ওপর যে দায়িত্ব ন্যস্ত হল, তা পালনের জন্য কিভাবে কি করতে হবে, আপনারাই তা ঠিক করে দিন। তাদের মধ্য থেকে একজন বললেন, বিচারদিবসে যদি শাস্তির হাত থেকে অব্যাহিত চান, তাহলে বৃদ্ধ মুসলিমগণকে পিতৃতুলা, তরুশদের ভ্রাতৃতুল্য, অপ্রাপ্ত বয়স্কদের সন্তানতুল্য, স্ত্রীলোকদের জননী ও ভগিনীতুল্য জ্ঞান করবেন।

খলিফা হারুন অর রশীদ বলেন আরও কিছু বলুন। ফোজায়েল (র) বললেন, এই রাজ্যকে নিজের বাড়িও প্রজাগণকে নিজের পরিবার-পরিজন বলে মনে করবেন। প্রবীণদের সঙ্গে নম্র ও ভদ্র আচরণ করবেন। সমবয়স্কদের সঙ্গে আপনার ব্যবহার হবে প্রীতিপূর্ণ। আর ছােটদের প্রতি বাৎসল্য প্রদর্শন করবেন।

ফোজায়েল ইবনে আয়াজ (র) আরও বলেন, আমার আশঙ্কা, আপনার এ দেহ-সুষমা ও কোমল শরীর জাহান্নামের আগুনে ঝলসে কদাকার হয়ে না যায়। কেননা, অনেক আমীর-বাদশাহ সেদিন জাহান্নামের আগুনের শিকার হবে।

দারুণ ভয়ে বির্বণ হয়ে গেলেন খলিফা হারুন অর রশীদ । বুক ফুলে কান্না উথলে উঠল। ফোজায়েল ইবনে আয়াজ (র) বলে গেলেন, আল্লাহকে ভয় করুন। পরকালের জবাবদিহির জন্য প্রস্তুত থাকুন। শেষ বিচারের দিনে আল্লাহ আপনাকে আপনার প্রতিটি প্রজা সম্বন্ধে জিজ্ঞাসাবাদ করবেন। তার জন্য তৈরী থাকুন। একটি বৃদ্ধাও যদি রাত্রে অভুক্ত থেকে পরদিন সকালে আপনার বিরুদ্ধে আল্লাহর কাছে অভিযােগ জানায়, তাহলে আপনার অবস্থা মারাত্মক হবে।

ফোজায়েল ইবনে আয়াজ (র)-এর কথায় খলিফা প্রচণ্ড কান্নায় ভেঙে পড়েন। সে কান্না সহ্য করতে পারলেন না ফজল বারমাকী। ফোজায়েল (র)-কে বললেন, এবার ক্ষান্ত হন তাপস! আপনি যে বাদশাহকে মেরে ফেলার যােগাড় করছেন। ফজলকে রীতিমত ধমক দিলেন ফোজায়েল ইবনে আয়াজ (র)। তুমি চুপ কর হামান। তুমি আর তােমার দলের লােকেরাই খলিফার সর্বনাশ করছে, আমি নই। খলিফার কান্না আরও বেড়ে যায়। অরুদ্ধ কণ্ঠে তিনি তাঁর সঙ্গীকে বলেন, উনি আপনাকে হামান বলছেন, তার মানে আমাকে ফিরাউন বলে মনে করছেন। পরে তাপসপ্রবরকে তিনি প্রশ্ন করেন, আপনি কি ঋণী?

হ্যা, আমি আল্লাহর কাছে ঋণী। তাঁর নির্দেশ ও উপাসনাই আমার ঋণ। এ ঋণের জন্য তিনি যদি আমাকে ক্ষমা না করেন, তাহলে তা আমার জন্য পরম পরিতাপ ও বিপদের কারণ হবে। খলিফা বললেন, কোন লােকের কাছে আপনি ঋণী কিনা, আমি তাই জানতে চাচ্ছি।

ফোজায়েল ইবনে আয়াজ (র) বললেন, আল্লাহকে ধন্যবাদ। আমি তার কাছ থেকে প্রভৃত সম্পদ লাভ করেছি। তার বিরুদ্ধে আমার কিছু বলার নেই। আর অন্যের কাছে ঋণী হওয়ার প্রশ্ন ও নেই। অতঃপর খলিফা হারুন অর রশীদ তার পায়ের কাছে এক হাজার দীনারের একটি থলে রেখে বললেন, এ মুদ্রাগুলি সম্পূর্ণ হালাল। এগুলি আমি আমার মায়ের সম্পত্তি থেকে পেয়েছি। দয়া করে নির্বিধায় গ্রহণ  করুন।

ফোজায়েলে ইবনে আয়াত (র) বড় ব্যথা পেলেন। বললেন, আমার সব কথা বৃথা গেল। এখনই আপনার অবিচার শুরু হয়ে গেল । আপনার ভার লাঘব করার জন্য আমি মুক্তির দিকে আহান করছি। আর আপনি আমার বােঝা ভারী করে নিজেকে মৃত্যু-গহরের দিকে ঠেলে দিচ্ছেন। হায়, হয়, আমার একটি কথাও কাজে লাগল না। এ বলে তিনি উঠে দাড়ালেন। খলিফা তাঁর অনুচর সহ ঘর থেকে নিষ্ক্রান্ত হওয়ামাত্র তিনি দরজা বন্ধ করে দিলেন।

বাদশাহ বারমাকাকে বললেন, হ্যা, ফোজায়েল ইবনে আয়াজ (র) প্রকৃত সাধক বটে। 

পিতাপুত্র কথাবার্তাঃ। নিজের ছেলেকে কোলে নিয়ে খুব আদর করছেন ফোজায়েল ইবনে আয়াজ (র) ছেলে বলল আব্বা, আপনি কি আমাকে খুবই ভালােবাসেন? পিতা বললেন, অবশ্যই। প্রাণের ন্যায় ভালবাসি।

আপনি কি আল্লাহকে ভালােবাসেন?

নিশ্চয়ই। তাকে আমি মনে-প্রাণে ভালােবাসি।

কিন্তু তা কি করে সম্ভব? একই সময়ে একই হৃদয়ে দুজনের ভালােবাসা কি স্থান পায়?

ফোজায়েল ইবনে আয়াজ (র) চমকে উঠলেন। এ কথা কি তাঁর পুত্রের? নাকি মহান আল্লাহর? সঙ্গে সঙ্গে প্রিয় পুত্রকে কোল থেকে নামিয়ে দিয়ে তিনি আল্লাহর দরবারে হাত ওঠালেন। প্রভু গাে, আমি শুধু আপনারই ভালােবাসায় আমার হৃদয়-মন সমর্পন করলাম।

আরও একটি পরিবর্তন এল তার পবিত্র জীবনে।

তিনি একবার দেখলেন, আরাফাতের ময়দানে দাঁড়িয়ে বহু মানুষ বিলাপ করছে। সকাতর প্রার্থনা জানাচ্ছে মহিমময় প্রভুর দরবারে। এ দৃশ্য দেখে তিনিও বিচলিত হয়ে বললেন, প্রভু আমার। এতগুলাে মানুষ এক সঙ্গে যদি কোন কৃপণের কাছে কাকুতি-মিনতি করে সাহায্যপ্রার্থী হয়, তাহলে সে কিছুতেই তাদের আর নিরাশ করতে পারে না। 

প্রভুগাে, আপনি দাতাশ্রেষ্ঠ, দয়াময়। নিঃসন্দেহে আপনি এদের প্রার্থনা মঞ্জর করবেন।

তাকে প্রশ্ন করা হয়, আপনি কি মনে করেন আরাফাতে কান্নারত সবাইকে আল্লাহ ক্ষমা করবেন? তিনি বলেন, এদের মধ্যে অধম ফোজায়েল যদি না থাকত, তাহলে সম্ভবত সকলেই আল্লাহর কাছ থেকে ক্ষমা লাভ করত। বিনয় মানুষকে কী মহত্ব দেয়, ঘটনাটি তার এক উজ্জ্বল স্বাক্ষর। মানুষ কখন আল্লাহপ্রেমের শীর্ষবিন্দুতে পৌছায়? এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, মানুষ যখন আল্লাহর প্রতি একই মনােভাব পােষণ করে তার কাছ থেকে কিছু লাভ করুক, বা না করুক।

প্রশ্নঃ কোন লােক হয়তাে এ ভয়ে লাব্বায়েক (আল্লাহ আমি হাজির) বলে না যে, পাছে তার উত্তরে তাকে শুনতে হয় ল - লাব্বায়েক' (না, তুমি উপস্থিত হওনি)- তাে এধরনের লােক সম্পর্কে আপনি কী ধারণা পােষণ করেন ?

উত্তরঃ মনে করি, এ লােকের, মর্যাদা লাব্বায়েক উচ্চারণকারীদের অপেক্ষা অনেক বেশি। ফোজায়েল ইবনে (র) সম্পর্কে হযরত ইবনে হাম্বল (র) বলেন, আমি তাঁকে বলতে শুনেছি, দ্বীনের উন্নতির উপায় যিনি অনুসন্ধান করেন, তিনি লােকচক্ষে হেয় প্রতিপন্ন হন। ইবনে হাম্বল (র) একবার তার কাছে কিছু উপদেশ শােনার আগ্রহ প্রকাশ করেন। ফোজায়েল ইবনে আয়াজ (র) বলেন, আপনি অনুসারী হােন, কিন্তু অনুসরনীয় হবেন না। 

হযরত বিশরে হাফী (র) তাকে জিজ্ঞেস করেন, পরহেজগারী উত্তম না রেজা ? তিনি জবাব দেন, রেজা। কেননা, রেজাতে যিনি সন্তষ্ট থাকেন। তিনি যা পান, তার চেয়ে বেশি চান না। যা পেয়েছেন তাতেই তিনি তুপ্ত। হযরত সুফিয়ান সওরী (রাঃ) এক রাতে হযরত ফোজায়েল ইবনে আয়াজ (র)- এর বাড়িতে অবস্থান করেন। বলা বাহুল্য, ধর্ম- আলােচনার মধ্যদিয়ে রাত শেষ হয়। পরদিন সকালে বিদায় নেবার প্রাক্কালে তিনি বলেন, রাতটি আমাদের জন্য খুবই শুভ ও কল্যাণপ্রসূ হল। ফোজায়েল ইবনে আয়াজ (র) এ কথার প্রতিবাদ করে, বললেন, না তা নয়। বরং রাতটি খুব অশুভ হয়ে গেল। কেন?

আপনি সারারাত আমাকে তােষণ করার ভঙ্গিতে কথাবার্তা বলেছেন। আর আমিও উত্তর দিতে গিয়ে আপনাকে খুশি করার চেষ্টা করেছি। অর্থাৎ, আমরা আলাপ- আলােচনায় মত্ত ছিলাম ঠিকই। কিন্তু তার মধ্যে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা জানানাে বা উপাসনার কিছু ছিল না। কাজেই এ রাতটা আমাদের অমূল্য কোন কল্যাণ বয়ে আনেনি

এত সূক্ষ্ম ভাবনা ফোজায়েল ইবনে আয়াজ (র)-এর মত সাধকের পক্ষেই সম্ভব। একটি লােক তার সঙ্গে দেখা করতে এল। তিনি তার আগমনের হেতু জানতে চাইলেন। লােকটি বললাে, আপনার সঙ্গে দেখা- সাক্ষাৎ ও আপনার অমূল্য কথাবার্তা শুনে সন্তোষ লাভের জন্য এসেছি। 

হযরত ফোজায়েল ইবনে আয়াজ (র) বললেন, আল্লাহর কসম, তােমার কথাটি পশুত্বের ভাব ছাড়া আর কিছু নয়। বস্তুত তুমি আমাকে মিথ্যা দিয়ে প্রতারিত করবে। আর আমিও তােমাকে তাই করব। অতএব তুমি বিদায় হও। 

এ আত্মগ্ন সাধক রােগাক্রান্ত হওয়ার ইচ্ছা পােষণ করতেন এ কারণে যে, তাহলে তাকে আর জামাতে নামায আদায় বা জনসমাজে যেতে হবে না। দুটি কাজেই গণ- সংযােগ ঘটে আর তা আল্লাহর ধ্যানে বিঘ্ন সৃষ্টি করে। প্রকৃত ধ্যান তাকেই বলে, যাতে হৃদয় ও চোখ শুধু আল্লাহতেই নিবন্ধ থাকে। উপাসনার মধ্যে যদি অন্যের দিকে দৃষ্টি যায় অথবা অন্য কিছু খেয়াল আসে মনে, তাহলে তা প্রকৃত উপাসনা নয়।

হযরত ফোজায়েল ইবনে আয়াজ (র)-এর অমৃতবাণীঃ 


১. সেই নির্জনবাস শ্রেয়- যেখানে আমি কাউকে দেখতে পাই না। এবং আমাকেও কেউ দেখে না।

২. যে আমার পাশ দিয়ে চলে যায় অথচ আমাকে সালাম জানায় না, ব্যাধিগ্রস্ত হলে যে আমাকে দেখতে আসে না, জানব, সে-ই আমার প্রতি সবচেয়ে সহানুভূতিশীল। 

৩. রাত্রির আগমনই খুশির কারণ। কেননা তখন নীরবে আল্লাহর ধ্যানে মগ্ন হওয়া যায়। আর দিনের আগমন দুশ্চিন্তার সৃষ্টি করে। কেননা তখন জনসমাগমে আল্লাহর উপাসনার বিঘ্ন ঘটে। 

৪. যে নির্জনত, পছন্দ করে না, বরং মানুষের সঙ্গে মেলামেশা ভালােবাসে, সে প্রকৃত শান্তি থেকে দূরে থাকে।

৫. যে আমল সম্পর্কিত কথা বলে কিন্তু আমল করে না, তার কথাবার্তা কোন কাজে আসে না। 

৬, আল্লাহকে যে ভয় করে, তার বাকশক্তি লােপ পায়।

৭. আল্লাহ যাকে ভালােবাসেন, তার ওপর নানা আপদ- বিপদ আসে। আর তিনি যাকে শত্রু বলে মনে করেন, সে সুখে- শান্তিতে বাস করে। 

৮. সবকিছুর যাকাত আছে। জ্ঞানের যাকাত চিন্তা ভাবনা। রাসূল করীম এজন্য গভীর চিন্তায় ও ধ্যানে থাকতেন।

৯. মনে যা আল্লহ, ভীতি, তার মুখে অর্থহীন কথা বের হয় না। আল্লাহ ভীতি তার কামপ্রবৃত্তি ও আসক্তি নষ্ট করে। তার পরনিন্দা- পরচর্চার স্বভাবও দূর হয়। 

১০, পৃথিবীর সবকিছু যদি আমার জন্য সিদ্ধ ও বৈধ করে দেয়া হয়, তবুও গলিত শব মনে করে আমি তা গ্রহণ করতে লজ্জা ও ঘৃণা বােধ করব। সংসারে প্রবেশ করা কঠিন কাজ নয়, কঠিন হল তা থেকে বেরিয়ে আসা। 

১১. পৃথিবী একটি পাগলা গারদস্বরূপ, আর তার অধিবাসীরা পাগলের মত। বন্দীরা যেমন বন্দিশালার শৃঙ্খলবন্ধ, তারাও তেমনি দুনিয়ার মায়া- মমতায় আবদ্ধ।

১২. মনে রেখাে, পারলৌকিক সম্পদের ঘাটতি না করে পৃথিবীতে কাউকে সম্পদ দান করা যায় না। জাগতিক জীবনে তুমি যা অর্জন করেছ, পরকালে তাই লাভ করবে। এখন এ জীবনে কম যা উপার্জন করা তােমার অভিরুচি।

হযরত ফোজায়েল ইবনে আয়াজ (র)-এর ইন্তেকালঃ হযরত ফোজায়েল ইবনে আয়াজ (র) মৃতুকালে স্ত্রী ও দুই মেয়ে রেখে যান। তিনি তার স্ত্রীকে বলে রাখেন, তাঁর মৃত্যুর পর ও তার স্ত্রীর মৃত্যুর আগে, স্ত্রী যেন মেয়ে দুটিকে নিয়ে আবু কোবায়েস পর্বতে গিয়ে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করেন যে, প্রভুগাে, আমার স্বামীর ইচ্ছাত্রুমে এ প্রার্থনা করছি। জীবিতকালে আমি আমার কন্যা দুটির হেফাজত করেছি সাধ্যমত। এখন আমার জীবন সন্ধ্যা ঘনায়মান। তাই অনাথিনীদের আপনার হাতেই সমর্পণ করছি। আপনি ইচ্ছামত এদের ব্যবস্থা করুন।

অতঃপর একদিন হযরত ফোজায়েল ইবনে আয়াজ (র) তার প্রতিপালকের কাছে ফিরে গেলেন। একদিন তাঁর পত্নীর জীবনের ও শেষলগ্ন এসে গেল। স্বামীর নির্দেশ-মত সকন্যা আবু কোবায়েস পর্বতে গিয়ে তিনি আল্লাহর দরবারে অন্তিম প্রার্থনা জানালেন। আর তখন, ঐ পথ ধরে চলছিলেন ইয়েমেনের বাদশাহ। তারও সঙ্গে ছিল তার দু পুত্র। 

তিনি ফোজায়েল ইবনে আয়াজ (র)-এর পত্নীর প্রার্থনা শুনে কৌতুহলবশত তাঁদের কাছে এলেন। সব বৃত্তান্ত শুনলেন। তারপর বললেন, আপনার যদি আপত্তি না থাকে, তাহলে আমার এ ছেলে দুটির সঙ্গে আপনার মেয়েদের বিয়ে দিতে চাই। তাপস- পত্নী বললেন, না, আমার কোন আপত্তি নেই।

জনপদ থেকে তখনই পালকি সংগ্রহ করে এনে ইয়েমেন- সুলতান সাড়ম্বরে তাঁদের দেশে নিয়ে গেলেন। তা মহাধুমধামের সঙ্গে শুভ শাদীমুবারক সম্পন্ন হল। আল্লাহর প্রিয়জন, এ মহান তাপস অর্জন করলেন আল্লাহর অপূর্ব রহমত।

আরও পড়ুনঃ  

* হযরত ইউসুফ ইবনে হুসায়েন রায়ী (রাঃ) জীবনী

* হযরত আবু হাফস হাদ্দাদ খোরাসানী (রাঃ) জীবনী

* হযরত আবু সুলায়মান দারায়ী (রাঃ) জীবনী

* হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মুবারক (রাঃ) জীবনী

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ