হযরত সুফিয়ান সাওরী (রঃ) জীবনী
এক অন্তঃসত্ত্বা নারী প্রতিবেশিনীর অনুপস্থিতিতে তাঁর অনুমতি ব্যতিরেকেই, একটি পাত্রে রক্ষিত কোন খাদ্যবস্তুর স্বাদ গ্রহণ করলেন আঙুলের ডগা দিয়ে। আর সঙ্গে সঙ্গে তাঁর গর্ভস্থ সন্তান থর থর করে কেঁপে উঠল। বুদ্ধিমতী, ধর্মভীরু নারী এর কারণ উপলদ্ধি করে প্রতিবেশিনীর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করলেন। আর ক্ষমা পাওয়া মাত্র পেটের সন্তানের কম্পন থেমে গেল।
এ গর্ভস্থ সন্তান হলেন পরবর্তী কালের এক বিখ্যাত সাধক-হযরত সুফিয়ান সাওরী (র)। সাওর তাকেই বলা হয়, যে গরুর মতাে অবােধ আচরণ করে। হযরত সুফিয়ান সাওরী (র)-এর এ পদবিটি প্রক্ষিপ্ত। একদিন মসজিদে ঢােকার সময় ডান পায়ের বদলে তিনি বাম পা বাড়ান। আর সঙ্গে সঙ্গে অদৃশ্য শব্দ শােনা যায়, হে সাওর! তুমি কি করছ? অর্থাৎ তুমি যে বলদের মতােই কাজ করছ। আল্লাহর তরফ থেকে তাকে সম্বােধন করা হয়েছিল বলে তিনি হযরত সুফিয়ান সাওরী (র) নামে পরিচিত হতে থাকেন।
দৈববাণী শােনা মাত্র আতঙ্কে তিনি সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়েন। যখন প্রকৃতিস্থ হলেন, তখন নিজের হাতে দাড়ি আকর্ষণ করে তিনি নিজের গালেই চড় মারতে শুরু করলেন। আর বলতে লাগলেন, রে মন, তুই যখন আল্লাহর ঘরের আদব রক্ষা করলি না, তখন সে বেআদবির প্রতিফল খুব ভালাে করেই পেলি। আল্লাহ তাের নামকে পশুর সঙ্গেই রেখে দিয়েছেন। অতএব এখনও সতক হয়ে চল। যেন আর কোনদিন এমন স্পর্ধা না হয়।
না, তাঁর মন আর তেমন স্পর্ধা দেখায়নি। পরবর্তীকালে তিনি আল্লাহর প্রিয় বন্ধুদের অন্যতম বলে স্বীকৃত হন। এমনকি, সুলতান, বাদশাহ খলিফা না হয়েও তিনি আমিরুল মুমিনীন নামে খ্যাত হন। তাঁর শিষ্টাচার সৌজন্য আর নম্রতা তাকে বিশিষ্ট করে তােলে। আর দ্বীনি এলমের জন্য তিনি তাে জগদ্বিখ্যাত। তাপসকুল শিরােমনি। বিখ্যাত বসরা শহরে হযরত সুফিয়ান সাওরী (র) জন্ম গ্রহণ করেন।
অনবধানবশত তিনি একবার এক শস্যখেতে পা দিয়ে ফেলেন। আর তখনও তাঁকে শুনতে হয় আল্লাহ যাকে ভালােবাসেন, তাকে বুঝি প্রতিপদে এমন সাবধান করে দেন। অর্থাৎ কোন সময়ে যেন তাঁর প্রিয় বন্ধুর পদস্থলন না ঘটে।
হযরত সুফিয়ান সাওরী (র) বলেন, জীবনে আমি এমন কোন হাদীস শুনিনি যার ওপর আমি নিজে আমল করিনি। তিনি হাদীসবেত্তাদের বলতেন, আপনারা কি হাদীসের যাকাত আদায় করেন? হাদীসের আবার যাকাত কি? তারা বলতেন। তিনি বলতেন, মালের যেমন শতকরা আড়াই ভাগ যাকাত দিতে হয়, তেমনি আপনারাও শােনা হাদীসের শতকরা মাত্র আড়াই ভাগের ওপরে চর্চা করে থাকেন।
হযরত সুফিয়ান সাওরী (র) একবার তৎকালীন খলিফার পাশাপাশি নামায পড়ছিলেন। নামাযের মধ্যে খলিফা দাড়ির মধ্যে হাত বুলালেন। নামায শেষে হযরত সুফিয়ান সাওরী (র) তাকে বললেন, এটা ঠিক না। হাশরের মাঠে ও ধরনের নামাযকে নাপাক গােলার আকারে নামাযীর মুখের ওপর ছুঁড়ে মারা হবে।
তার কথা শুনে খলিফা দারুণ ক্রুদ্ধ হয়ে তাঁকে শূলে চড়াবার নির্দেশ দিলেন। এ নির্দেশ হযরত সুফিয়ান সাওরী (র)-এর কানে গেলে তিনি বললেন, প্রাণের জন্য আমার কোন মায়া নেই। তবে ধর্মের রীতিনীতির প্রতি আমার অন্তরে রয়েছে অফুরন্ত প্রেম।
পরদিন তাঁকে শূলে চড়ানাে হবে। তিনি হযরত সুফিয়ান উআইনিয়ার (রাঃ) দু'জানুর ওপর মাথা রেখে তার প্রতিপালকের উদ্দেশে বলছিলেন, হে প্রভু, আমি আপনার ন্যায্য কথা বলেছি-যার জন্য খলিফা আমার মৃত্যু দণ্ড দিয়েছেন। আজ তা কার্যকর হবে। আপনার নিকট এ বিষয়ে বলার কিছু নেই। যেহেতু আপনি সব কিছুই প্রত্যক্ষ করছেন।
এদিকে খলিফা হাত-পা বাঁধা অবস্থায় তাকে দরবারে হাজির করার হুকুম দিলেন। খলিফার আদেশ পালন করার জন্য তার অনুচরবর্গ যেই দরবার থেকে বের হয়েছেন, অমনি আল্লাহ্ পাকের গজৰ স্বরূপ দরবার কক্ষের ছাদ ধসে পড়ল। আর পরিষদবর্গসহ খলিফা নিহত হলেন।
এ ঘটনার পর কেউ কেউ বলেন, হুজুরে দোয়ার ফলাফল এত দ্রুত ও ভয়ঙ্করভাবে ফলতে কোথাও দেখিনি। হযরত সুফিয়ান সাওরী (ব) বলেন, হক কথা বলার জন্যই দোয়ার ফল এতটা তীব্র হয়েছে।
খলিফার অপমৃত্যুর পর নতুন খলিফা নির্বাচিত হলেন। তিনি তাঁর পূর্বসূরির পরিণতি সম্পর্কে সম্যক ওয়াকিবহাল ছিলেন। তাই সাধক সুফিয়ান সাওরী (র)-এর সঙ্গে কোনরূপ অশিষ্টাচরণ না করে সুসম্পর্ক বজায় রেখে চললেন। কিছুদিন পর দেখা গেল, হযরত সুফিয়ান সাওরী (র) ব্যাধাগ্রস্ত হয়ে ক্রমশ ক্ষীণ হয়ে যেতে লাগলেন। কোন চিকিৎসকেই তাকে রােগমুক্ত করতে পারলেন না।
তিনি ভাবতে থাকেন, যে ধর্মে এমন আল্লাহ-ভীরু লােক থাকেন, তা কখনই সত্য ও খাটি না হয়ে যায় না। তিনি তখন হযরত সুফিয়ান সাওরী (র)-এর কাছে ইসলাম ধর্মে দীক্ষা গ্রহণ করেন। একথা শুনে খলিফা শুনে খলিফা মন্তব্য করলেন, আমি চিকিৎসককে পাঠালাম রােগীকে রােগমুক্ত করার জন্য। আর এখন দেখছি তিনি গিয়েছিলেন তাঁর নিজের চিকিৎসার গরজে।
আর তাঁর উদ্দেশ্যেও সফল হয়েছে। যৌবনেই তিনি কুঁজো হয়ে যান। এর কারণ জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, তাঁর এক জ্ঞানী শিক্ষাগুরু ছিলেন। তিনি একদিন দুঃখ করে তাঁকে বলেন, দীর্ঘ পঞ্চাশ বছর ধরে মানুষকে তিনি সৎপথ দেখিয়ে আসছেন। অথচ এখন তারা পথ প্রদর্শনের যােগ্য নয় বলে তাঁকে তাড়িয়ে দিচ্ছে। গুরুর মুখে এ কথা শুনে তার দুঃখের তার পিঠ বেঁকে যায়।
এক যুবক একদিন তাঁকে দু’থলে আশরাফী উপহার দিয়ে পাঠালেন। বলে পাঠালেন, হযরত সুফিয়ান সাওরী (রাঃ)-এর সঙ্গে তার পিতার বন্ধুত্ব ছিল। তারই নির্দর্শনরূপে বৈধ। কিন্তু হযরত সেগুলি গ্রহণ না করে লিখে পাঠলেন, তােমার পিতার সঙ্গে আমার কেবল দ্বীনি বন্ধুত্ব ছিল, কোনরূপ পার্থিব সম্পর্ক নয়। কাজেই এ আশরাফী নেওয়া গেল না।
এ ঘটনা হযরত সুফিয়ান সাওরী (র)-এর পুত্র শুনতে পেয়ে বলেন, আমি অনেকগুলি সন্তানের পিতা এবং অভাবগ্রস্ত। আপনি ঐ আশরাফী ফেরত না পাঠিয়ে আমাকে দিলে আমার বড় উপকার হতাে। পুত্রের কথা শুনে হযরত সুফিয়ান সাওরী (র)-এর বললেন, দ্বীনি সম্পককে এভাবে পার্থিব বিষয় দিয়ে নষ্ট করতে পারি না। তবে সে যদি নিজে তােমাকে কিছু দেয়, তুমি তা নিতে পার।
তিনি কারাে কাছ থেকে কোন উপকার গ্রহণ করতেন না। এক ব্যক্তির উপকার গ্রহণ না করায় তিনি বলেন, এমন নয় যে, আপনি আমাকে উপদেশ দান করেছেন, আর তার বিনিময় স্বরূপ আমি এ উপহার দিচ্ছি। অতএব আপনি এটা গ্রহণ করতে অনিচ্ছুক কেন? তিনি বললেন, আমি তােমাকে উপদেশ দিইনি ঠিকই। তবে উপহার ছাড়াই আমি তােমার বহু মুসলিম ভাইকে উপদেশ দিয়ে থাকি।
প্রয়ােজন হলে হয়তাে তােমাকেও দেব। আর তােমার তােহফা গ্রহণ করলে তােমার প্রতি আমার কিছুটা আকষর্ণ বেড়ে যেত। আর তার নামই হলাে দুনিয়া-যা থেকে আমি দূরে থাকতে চাই। আল্লাহ ছাড়া কোনদিকেই আমার এতটুকু ঝোক নেই। তুমি তা সৃষ্টির জন্য মােটেই চেষ্টা করে না।
তিনি চলেছেন কোন প্রাসাদের পাশ দিয়ে। তার সঙ্গী বেশ মনােযােগ সহাকরে প্রাসাদ দেখতে লাগলেন। তিনি তা লক্ষ্য করে বললেন, ধনী লােকেরা এভাবে বৃথা ব্যয় করে। আর সেগুলি যারা খুব আগ্রহ নিয়ে দেখে, তারাও পাপে লিপ্ত হয়। একবার তিনি এক মৃত ব্যক্তির জানাজায় অংশ গ্রহণ করেন। উপস্থিত সবাই সে ব্যক্তির গুণগাণ করছে। এসব দেখেশুনে তিনি বলেন, তােমরা যে যা-ই বল, লােকটি কিন্তু মােনাফেক ছিল। আগে জানলে আমি তার জানাযায় শামিল হতাম না। সে যে মােনাফেক ছিল, তার প্রমাণ হিসেবে তিনি বললেন যে, দুনিয়ার লােক তার প্রশংসা করছে। অথাৎ দুনিয়া বাসির সঙ্গে তার গভীর সম্পর্ক ছিল। এটা সুলক্ষণ নয়।
একদিন দেখা গেল, গায়ের জামাটি উল্টো করে পরেছেন। কে যেন বললাে হুজুর, জামাটি ঠিক করে নিন। তিনি বললেন, তােমাদের চোখে ভালাে দেখাবার ইচ্ছায় আমি জামা পরিনি। পরেছি কেবল আল্লাহর জন্য।
লােকটি তাে পরম খুশি। সে রাজি হয়ে গেল। আর হযরত সুফিয়ান সাওরী (রাঃ)-ও খুশি মনে তার চার হজ্জের পুণ্য তাকে দান করে তার আহা' শব্দের পুণ্য গ্রহণ করলেন।
ঐ রাতে তিনি স্বপ্ন দেখলেন, এক শান্ত সৌম্য জ্ঞানী ব্যক্তি তাকে বলছেন, তুমি ঐ লােকটির কাছ থেকে যে পুণ্য অর্জন করেছ, তা যদি আরাফাতে সমবেত সমস্ত হজ্জযাত্রীরা মধ্যেও বণ্টন করে দাও, তবু প্রত্যেককেই পুণ্যের দিক দিয়ে বড় ধনী হয়ে যাবে।
একদিন এক হাম্মামখানা থেকে তিনি এক অল্পবয়স্ক দাড়ি গোঁফশূন্য কিশােরকে বের করে দিতে বলেন। এর কারণ হিসেবে বলেন, প্রত্যেক নারীর সঙ্গে একটি শয়তান থাকে। আর দাড়ি বিহীন গৌফশূন্য সুশ্রী বালকের সঙ্গে থাকে আঠারােটি। শয়তান মানুষের চোখে এদের সৌন্দর্য আরও বাড়িয়ে দেয়।
আর একদিন, খাবারের সময় একটি কুকুর এলে তিনি তৎক্ষণাৎ একটুকরাে রুটি ছুড়ে দেন। তাকে জিজ্ঞেস করা হলাে, আপনি পরিবার-পরিজনদের নিয়ে খেতে বসেন না কেন? তিনি উত্তর দেন, আপনজন হলেও তারা আমার উপাসনার বিঘ্ন ঘটায়। অথচ এ কুকুরটি রাত্রে প্রহরায় নিযুক্ত থেকে লােকজনদের বাধা দেয়। ফলে আমি নিরিবিলি ইবাদত করতে পারি।
একবার হজ্জযাত্রার প্রাক্কালে তিনি বড় কান্নাকাটি করেন। লােকজন জিজ্ঞেস করেন, পাপের ভয়ে আপনি এমন করে কাদছেন কেন? তিনি বলেন, না, পাপের ভয়ে নয়। আমার ঈমান খাঁটি কিনা, এই কথা ভেবে আমি রােদন করছি। পাপের ক্ষেত্রে আল্লাহর রহমত খুবই ব্যাপক ও শক্তিশালী।
তিনি তার শিষ্যদের বলেন, মানুষ উপাদেয় খাবারের জন্য বড় আগ্রহী। কিন্তু কোন উপাদেয় বস্তু বিস্বাদ হতে কতক্ষণ? খাদ্যবস্তু কণ্ঠনালীর শেষপ্রাপ্ত পর্যন্ত যতক্ষণ থাকে, ততক্ষণই স্বাদ কিংবা বিশ্বাদ। এর নিচে গেলে তাে আর কিছুই থাকে না। তাহলে এই ক্ষণস্থায়ী বস্তুর প্রতি এত মােহগ্রস্ত হয়ে কী লাভ। তিনি বলেন, একমাত্র আল্লাহই, অন্য কেউ নয়, আরিফকে মারেফাত দান করেন, আবিদকে নৈকট্য দেন, হাকিমকে হেকমত দিয়ে থাকেন। তিনি আরও বলেন, ক্রন্দন দশ রকমের।
তার মধ্যে নয় প্রকার হলাে রিয়া। শুধু একটিই আল্লাহর ভয় মিশ্রিত। আল্লাহর ভয়ে নির্গত এক ফোঁটা অশ্রু সারা জীবনের ক্রন্দনের চেয়ে শ্রেয়। যে কান্নার মধ্যে আল্লাহর ভয় নেই । তিনি আরও বলেন, পুণ্যবানদের পুণ্য কর্মগুলি ফেরেশতাগণ পুণ্যের দপ্তরে লিখে রাখেন। কিন্তু পুণ্যবানরা যদি পুণ্যকর্ম করে অহঙ্কার প্রকাশ করেন, তবে সেগুলি রিয়ার দপ্তরে লিখিত হয়।
উপাসকগণ যদি সুলতান-বাদশাহ বা আমীর-উমরাদের সংশ্রবে থাকেন, তবে অচিরেই তাঁরা রিয়াকার হয়ে পড়ে। তিনি বলেন, "যাদেরহ' তাকে বলে যে উপাসনা করে অথচ তা নিয়ে কোন গৌরব করে না। বা ঢাক ঢােল পিটিয়ে তা প্রচারও করে না। আর 'যােহদ -এর প্রকৃত অর্থ হলাে মামুলি খাদ্য গ্রহণ করা। মােটা বস্ত্র পরিধান করা। দুনিয়ার প্রতি আকৃষ্ট না হওয়া এবং আশা আকঙ্ক্ষাকে বাড়িয়ে না তােলা। তিনি বলেন, নির্জনবাসীগণ পরকালের মুক্তি অর্জন করবেন।
নির্জনবাসে রুজি মিলবে কি করে? এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, যাদের অন্তরে আল্লাহভীতি বর্তমান, তাদের রুজি কোথেকে আসে, তা তারা টেরও পান না। তিনি বলেন, দুনিয়াদারদের পক্ষে নিদ্রা জাগ্রত অবস্থা অপেক্ষা উত্তম। কারণ, তারা ঘুমন্ত অবস্থায় দুনিয়ার চিন্তা-ভাবনা থেকে মুক্ত থাকেন। তিনি আরও বলেন, যাহেদের সঙ্গে সংসর্গ স্থাপনকারী যাহেদ অপেক্ষা আত্মসাৎ করে। ইয়াকীন বলতে তিনি বুঝতেন কলবী আওয়াজকে। যার মধ্যে ইয়াকীন থাকে, তিনি মারেফাতে হাসিল করতে পারেন। আর এর অর্থ এ-ও হতে পারে যে, যার মধ্যে ইয়াকীন রয়েছে, তিনি যে কোন বিপদে-বিপর্যয়কে আল্লাহ ইচ্ছা বলে গণ্য করেন।
অতিরিক্ত মাংসাহারী আল্লাহর শত্রু' রাসূলুল্লাহর এ কথার মর্ম কি? তার উত্তর: এখানে মাংস আহার আহার করা অর্থ পরনিন্দা-পরচর্চা করা। কেননা, পরনিন্দা বা গীবত মুসলিমদের কাছে মৃতদেহের মাংস ভক্ষণ করা। গীবতকারীকে আল্লাহ শত্রু বলেই জানেন।
হযরত সুফিয়ান সাওরী (র)-এর ইন্তেকালঃ অন্তিম মুহুর্তে আসন্ন। তাঁর নির্দেশে হযরত আবদুল্লাহ মেহেদী তাকে মাটির ওপর রেখে দিলেন। তরপর বাইরে গেলেন তাঁর শেষ বিদায়ের কথা সবাইকে বলতে। বাইরে গিয়ে আবদুল্লাহ মেহেদী অবাক। অসংখ্য মানুষ এসে ভিড় করেছে সেখানে। তিনি তাদের ভিড় জমাবার কারণ জিজ্ঞেস করলেন। জনতার পক্ষ থেকে বলা হলাে, গত রাতে তারা স্বপ্ন দেখেছে, আল্লাহর প্রিয় বান্দা হযরত সুফিয়ান সাওরী (র) দুমিয়া থেকে বিদায় নিয়েছেন। তার কাফন-দাফনে তাদের আজই যােগ দিতে বলা হয়েছে। আর এখবর শুনে তারা এখানে ছুটে এসেছে।
অতঃপর লােকজন যখন ভেতরে তাঁর অন্তিম শয্যার পাশে এসে দাঁড়াল তখন তিনি তাঁর মাথার পার্শ্বস্থিত বালিশের তলা থেকে এক হাজার টাকার একটি থলে বের করে দিয়ে সেগুলি গরিব দুঃখীদের দান করতে বললেন। অনেকের মনে প্রশ্ন এল, তিনি নিজে সঞ্চয়ের বিরুদ্ধে বলতেন। অথচ নিজে এতগুলাে টাকা জমা করেছেন। হযরত সুফিয়ান সাওরী (র) মানুষের মনের প্রশ্ন অনুধাবন করে বলেন, ঈমান রক্ষার প্রয়ােজনে আমি এগুলাে জমা করে রেখেছিলাম।
যখন ইবলীস আমাকে জিজ্ঞেস করত, তােমার ভরণ-পােষণ কোথেকে মার নিজের কোন প্রয়ােজন নয়, শয়তানের প্রতারণা থেকে বাঁচবার জন্যই এটা জমা রেখেছিলাম। শেষ কথাগুলি শেষবারের মতাে উচ্চারণ করে তিনি দুনিযা ত্যাগ করলেন। ইন্না লিল্লাহি অ ইন্না ইলাইহি রাজেউনআসবে? আবার যখন সে বলত, তােমার কাফন জুটবে কোথেকে? তখনও তাকে এই টাকার কথা বলতাম। তখনও তাকে এই টাকার থলেটা দেখিয়ে দিতাম। সে আমার কাছে পাত্তা পেত না। আসলে, আ
আরও পড়ুন
* হযরত যুননুন মিশরী (রাঃ) জীবনী
* হযরত রাবেয়া বসরী (রাঃ) জীবনী
0 মন্তব্যসমূহ