নতুন পোস্ট

6/recent/ticker-posts

বিখ্যাত মনীষী হযরত শায়খ আবু বকর কেতানী (রঃ) এর জীবনী বাংলা

 
হযরত শায়খ আবু বকর কেতানী (রঃ)

বিখ্যাত মনীষী হযরত শায়খ আবু বকর কেতানী (রঃ)

বিখ্যাত মনীষী হযরত শায়খ আবুবকর কেতানী (র) মক্কা শরীফে বাস করতেন। আল্লাহর সেরা আবিদ নামে তিনি সুবিদিত। গৃঢ় তত্ত্বে বিশেষ পারদর্শী ছিলেন। আর ছিলেন দয়ার্দ্র-চিত্ত। তাঁর দানশীলতার কোন তুলনা ছিল না। তিনি হযরত জুনায়েদ বাগদাদী (র), হযরত আবু সাঙ্গদ খাররাজ (র) ও হযরত আবু হাসান নূরী বাগদাদী (র)-এর সাহচর্যে লাভ করেন। তাঁকে বলা হত হেরাম শরীফের প্রদীপ।

কথিত আছে, তিনি এশা থেকে ফজর পর্যন্ত নফল নামাযে রত থাকতেন। ঐ নামাযে প্রতিরাতে একবার করে কুরআন পাক খতম করতেন। শােনা যায়, ত্রিশ বছরের মধ্যে তিনি মােট বারাে হাজার বার কাবা শরীফ তওয়াফ করেন। আর ত্রিশ বছর ধরে হরম শরীফের একটি নির্দিষ্ট স্থানে বসে থাকতেন। ঐ ত্রিশ বছর কাটে বিনিদ্র অবস্থায়।

প্রথম জীবনে মায়ের অনুমতি নিয়ে তিনি হজ্বে যান। পথে ঘটনাক্রমে তাঁর গােসল অবশ্য করণীয় হয়ে ওঠে। তাতে তাঁর ধারণা হল, মা অনুমতি দিলেও হয়তাে তা খুশি মনে দেননি। ফলে, তিনি বাড়ি ফিরে আসেন। আর দেখেন, মা দরজায় বসে আছেন বিষন্ন মনে। তিনি মাকে জিজ্ঞেস করলেন, আপনি কি আমাকে হজ্বে যাওয়ার অনুমিত দিয়েছিলেন? মা বললেন, দিয়েছিলাম, তবে তুমি যে কোঠায় থাকতে, সেখানে গিয়ে তােমাকে দেখতে না পেয়ে আমার শূন্যঘর থেকে বেরিয়ে এসে আমি প্রতিজ্ঞা করলাম, যতদিন তুমি বাড়ি না ফিরবে, ততদিন আমি আর ঘরে ঢুকব না। 

সেদিন থেকে আমি বাইরেই বসে আছি। মায়ের কথায় তিনি বুঝতে পারলেন মাকে এভাবে একা ফেলে রেখে হজ্বে যাওয়া তাঁর মােটেই ঠিক হয়নি। তিনি প্রতিজ্ঞা করলেন, যতদিন মা বেঁচে থাকবেন, তিনি আর হজ্বে যাবেন না। আর শুরু করলেন মায়ের সেবা-পরিচর্যা।

মায়ের মৃত্যুর পর হজ্জ যাত্রার আর বাধা রইল না। তিনি হজ্বে গেলেন। পথে যেতে যেতে এক মাঠে দেখলেন, এক দরবেশ হাসাহাসি করছেন। তিনি তাকে বললেন, আপনি জীবিত না মৃত, অথচ এভাবে হাসছেন, এর রহস্য বুঝতে পারলাম না। দরবেশ বললেন, আল্লাহর প্রেমের ধারাই এরূপ। আল্লাহ প্রেমীগণ মরেও অমর।

হযরত আবুল হাসান মুযাইয়ান (র) মনে মনে ভাবতেন, তিনি যখন খুব বড় একজন দরবেশ, তখন আল্লাহর ওপর নির্ভর করে পাথেয় ছাড়াই হজ্বে যাওয়া উচিত। যেমন ভাবা তেমনি কাজ। সত্যিই তিনিই হজ্জ যাত্রায় বেরিয়ে পড়লেন।


তারপর একদিন এক নদীর তীরে বসে ভাবতে শুরু করলেন, সত্যিই তিনি এক সিদ্ধপুরুষ, না হলে বিনা সম্বলে এতদূরে পথ তিনি এলেন কি করে? হঠাৎ পেছনে এক বজ্রনাদ, ওহে, অহংকার ত্যাগ কর। শব্দ শুনে তিনি পেছনের দিকে তাকালেন। দেখলেন, দাঁড়িয়ে আছেন হযরত আবুবকর কেতানী (র)। নিজের ভুল বুঝতে পেরে আল্লাহর দরবারে তওবা করলেন।

হযরত আবুবকর কেতানী (র) যখনই মনে করতেন, তাঁর কোন ত্রুটি-বিচ্যুতি ঘটেছে। তখনই কাবাঘর তওয়াফ করে আল্লাহর দরবারে সকাতরে প্রার্থনা জানাতেন। তাতে আল্লাহ পাক তার ক্রটি দূর করে দিতেন। ক্রমে ক্রমে আল্লাহর সঙ্গে তাঁর এমনই নৈকট্য আসে যে, দোয়া করার কথা তাঁর মনেও থাকত না। তখন আল্লাহ নিজেই বলতেন, আমি যখন তােমার বন্ধু হয়েছি তখন আমাকে ডাকার কি দরকার?

হযরত আবুবকর কেতানী (র) হযরত আলী (রা)-এর প্রতি অপ্রসন্ন ছিলেন এই কারণে যে, তিনি যদি খেলাফতের দায়িত্ব মুয়াবিআর ওপর তুলে দিতেন, তাহলে এত রক্তপাত ঘটত না। যদিও রাসূলে করীম (স)-এর ঘোষণা অনুযায়ী, হযরত আলী (র) খুব বড় বীর আর সত্যের ওপর প্রতিষ্ঠিত ছিলেন, আর মুয়াবিআ দাঁড়িয়ে ছিলেন। অসত্যোর ওপর। তিনি তখন ছিলেন সাফা ও মারওয়া পাহাড়ের মধ্যবর্তী স্থানে। হঠাৎ এক রাত্রে স্বপ্ন দেখলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) চার খলিফাকে সঙ্গে নিয়ে তাঁর কাছে এসে আলিঙ্গন করলেন। 

তারপর হযরত আবুবকর (র)-কে সনাক্ত করলেন। এভাবে, রাসূলুল্লাহ (স) প্রশ্নের উত্তরে তিনি হযরত উমর (রা) ও হযরত উসমান (র)-কেও সনাক্ত করলেন। সবশেষে রাসূলুল্লাহ (স) যখন হযরত আলী (র)-এর পরিচয় জানতে চাইলেন, তখন হযরত আবুবকর কেতানী (র) তাঁর প্রতি বিরূপ ধারণা পােষণ করতেন বলে লজ্জাবশত কিছু বলতে পারলেন না। তখন নবীজী নিজেই বললেন, ইনি তােমার ভাই, আলী। 

তখন তিনি হযরত আলী (র)-এর সঙ্গে আলিঙ্গণ করলেন। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (সাঃ) হযরত আলী (র)-কে রেখে, অন্যদের নিয়ে চলে গেলেন। হযরত আলী (র) বললেন, চল আমরা বু-কুবাইস পর্বত ভ্রমণ করে আসি। হযরত আবুবকর কেতানী (র) থেকে কাবা শরীফ দর্শন করলেন। ঠিক এই সময় তাঁর ঘুম ভেঙে গেল। জেগে দেখলেন, সত্যিই তিনি রয়েছেন বু-কুবাইস পর্বত শিখরে। আর অনুভব করলেন, হযরত আলী (র)-এর প্রতি তার বিন্দুমাত্র বিরূপ ধারণা নেই।

একদিন এক জ্ঞানী ব্যক্তি বাবে বনী শায়বা থেকে বের হয়ে হযরত আবুবকর কেতানী (র)-কে বললেন, মাকামে ইব্রাহীমের কাছে একজন হাদীসবিদ হাদীস ব্যাখ্যা করছেন। চলুন, শুনে আসি। তিনি বললেন, ঐ মুহাদ্দিস কোন কোন সনদ থেকে হাদীস বয়ান করেন, জানেন কি? জ্ঞানী ব্যক্তিটি হযরত আবদুর রহমান (র), হযরত মুআম্মার (র) এবং হযরত আবু হােরায়রা (র) প্রমুখের নামােল্লেখ করলেন। হযরত আবুবকর কেতানী (র) বললেন, আমার মন তাে স্বয়ং আল্লাহর তরফ থেকে হাদীস বর্ণনা করে থাকে।

জ্ঞণী ব্যক্তি বললেন, প্রমাণ এই যে , আমি আপনাকে চিনি। আপনি হযরত খিজির (আ)। তাঁর কথা শুনে হযরত খিজির (আ) বললেন, আমার এতদিন ধারণা ছিল, দুনিয়াতে এমন কোন ওলী রয়েছেন, যাকে আমি যানি না। আজ আমি দেখতে পেলাম, তেমন একজন ওলী রয়েছেন, যাকে আমি জানি না, অথচ তিনি আমাকে খুব ভাল করেই চেনেন।

একদা তিনি একা-একা নামায পড়ছেন। একটা চোর তাঁর চাদরখানা টেনে নিয়ে দ্রুত পালিয়ে গেল। কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে তার দুখানা হাতই অবশ হয়ে গেল। এতে দারুণ ভয় পেয়ে চোরটি চাদর নিয়ে আবার ফিরে এল। তারপর তার কাধের ওপর রেখে চুপ করে বসে পড়ল। নামায শেষ হলে, সে তাঁর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করল। তিনি বললেন, তুমি কী করেছ, আমি তাে বুঝতে পারছি না। ব্যাপার কী? সে সমস্ত ঘটনা খুলে বলল। ঘটনা শুনে তিনি তৎক্ষণাৎ তাকে ক্ষমা করলেন। তার জন্য দোয় করলেন। আর হাত দুখানি আবার স্বাভাবিক হয়ে গেল।

এক রাতে তিনি এক সুদর্শন পুরুষকে স্বপ্নে দেখে তাঁর পরিচয় জিজ্ঞেস করলেন। জানা গেল, সে রূপবান পুরুষটি হলেন তাকওয়া তথা ধর্মনিষ্ঠা। তিনিও এও জানালেন যে, তাঁর ঠিকানা হল দুঃখী, দুর্দশাক্লিষ্ট মানুষের হৃদয়।

আরেক রাতে স্বপ্নে দেললেন এক কুরূপা নারীকে। জানা গেল, তার নাম মুসীবত। আ তার ঠিকানা হল, আনন্দিত ফুর্তিবাজ মানুষের অন্তকরণ। এ দুটি স্বপ্ন দেখে তিনি প্রতিশ্রুতিদ্ধ হলেন যে, তিনি জীবনে কোনদিন খুশি ও আনন্দের পশ্চাদ্ধাবন করবেন না।


এক রাতে রাসূলুল্লাহ (স) স্বপ্ন যােগে তাকে কিছু মাসয়ালা শিক্ষা দিলেন। আরেক রাত্রে তিনি তার কাছে স্বপ্নযােগে অনুরােধ করলেন, আপনি আমাকে এমন একটি আমল শিক্ষা দিন, যাতে আমার লােভ-লাসার নিবৃত্তি ঘটে। তখন তিনি তাকে একটি দোয়া প্রতিদিন চল্লিশবার করে পাঠ করতে বললেন। দোয়াটি এরূপ: লাইলাহা ইল্লা আনতা আসয়ালুকা আন তুহইয়ী ক্বাবলী বিনূয়ী মারিফাতিকা আবাদা।

একবার এক দরবেশ কান্নারত অবস্থায় তাকে বলেন, তিনি একবার বিশদিন পর্যন্ত একটানা উপবাসে থাকেন। তখন তাঁর রিপু সে কথা মানুষের কাছে প্রকাশ করতে শুরু করে। এ অবস্থায় তিনি রাস্তার ওপর একটি দিরহাম দেখতে পান। তাতে লেখা ছিল, আল্লাহ্ কি তােমার উপবাসের কথা অবহিত ছিলেন না। তােমার অবস্থার কথা মানুষের কাছে প্রকাশ করতে গেলে যে!

হযরত আবুবকর কেতানী (র)-এর অমূল্য বাণীঃ  ১. রােজ কিয়ামতে যেমন আল্লাহ ছাড়া কোন সাহায্যকারী থাকবে না, তেমনি দুনিয়াতেও তিনি ছাড়া আমাদের কোন সাহায্যকারী আছে বলে মনে করাে না। 

২. সৃষ্ট বস্তুর প্রতি আসক্তি আযাব স্বরূপ। সংসারের প্রতি আসক্ত মানুষের সংসর্গ অবলম্বন করা পাপ, আর তাদের প্রতি অনুরাগ প্রকাশ করা অপমানের কারণ। 

৩. তিনি বলেন, ত্যাগ, বদান্যতা আর উপদেশ অপেক্ষা উপকারী বস্তু আর নেই।

৪, যিনি কিছু পেয়ে বা না পেয়ে সর্বসহায় আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্ট থাকেন, তিনিই সর্বত্যাগী।

৫, জীবনের একটি মুহূতে আল্লাহর যিকির থেকে বিরত থেকো না। বিপদে ধৈর্য অবলম্বন । আর আল্লাহর ইচ্ছার ওপর সন্তুষ্ট থাক।

৬, তাসাউফ হল মানুষের উন্নত চরিত্রের নিদর্শন। যার চরিত্র যত বেশি উন্নত, তার তাসাউফও তত বেশি উন্নত।

৭, আল্লাহর ওলীগণ প্রকাশ্যে বন্দীস্বরূপ, কিন্তু ভেতরে আসলে তাঁরা স্বাধীন মানুষ।

৮, আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা বা তওবা হল ছয়টি জিনিসের সমষ্টিবাচক নাম। যথা, (১) পূর্বকৃত পাপের জন্য মনে মনে অনুতাপ করা, (২) ভবিষ্যতে আর যাতে পাপলিপ্ত হতে না হয় তার প্রতি সজাগ থাকা, (৩) আল্লাহর যে হক নষ্ট হয়েছে তা পুরণ করা, (৪) মানুষের যে হক নষ্ট হয়েছে, তা আদায় করা, (৫) অবৈধ খাদ্য খেয়ে শরীরের যে মেদমাংস বৃদ্ধি হয়েছে তা ক্ষয় করে ফেলা ও (৬) পাপের মিষ্টতা যেমন আস্বাদন করা হয়েছে, ঠিক তেমনি শরীর ও মনকে সাধনার তিক্ততা ভোগ করতে দেয়া ।

৯. নির্ভরতার প্রকৃত পরিচয় হল জ্ঞান এবং সিদ্ধ একীনের অনুবর্তী হওয়া। 

১০, সুফী তিনিই, যিনি উপাসনাকে কঠিন মনে করেন না। 

১১. মানুষ যখন আন্তরিকভাবে তওবা করে, তখন তার জন্য আল্লাহর ক্ষমার দরজা উন্মুক্ত হয়।

১২. আল্লাহ তাঁর প্রিয় দাসদের হাজত নিজেই পূর্ণ করেন।

১৩. রিপুর কামনা-বাসনা পরিত্যাগ করা ও আল্লাহর কাজের থেকে সরে থাকার জন্য অনুতাপ অনুশােচনা করা যাবতীয় উপাসনা থেকে উত্তম।

১৪. তোমার চোখে যতক্ষণ না তন্দ্রা নেমে আসছে, ততক্ষণ পর্যন্ত শয়ন করাে না। 

১৫. যতক্ষণ পর্যন্ত তোমার পেটে খুব বেশি ক্ষুধার উদ্রেক না হয়, ততক্ষণ পর্যন্ত আহার করাে না। আর যতক্ষণ কথা বলার বেশি প্রয়োজন না হয়, ততক্ষণ পর্যন্ত কথা বলাে না। 

১৬. কাম দৈত্য-দানবের লাগাম স্বরূপ। যে কাম দমন করে রাখে, সে যেন দৈত্য-দানবকে পরাভূত করল। 

১৭. আল্লাহ ও মানুষের হক আদায় করা, ন্যায়নিষ্ঠা অক্ষুন্ন রাখা ও সত্য-সততা ঠিক রাখা-এই তিনটি হল ধর্মের ভিত্তিস্বরূপ । হক আদায় করা অঙ্গপ্রত্যঙ্গের কাজ, ন্যায়নিষ্ঠা বজায় রাখা অন্তরের কাজ। কেননা, ন্যায়-অন্যায়ের অনুভূতি অন্তরের মাধ্যমেই হয়ে থাকে। আর সত্য ও সততা রক্ষা করা জ্ঞানের কাজ। 

১৮, রাত শেষের বাতাস এমন এক স্নিগ্ধ বস্তু, যার অবস্থান আল্লাহর আরশের নিচে। আর তা প্রত্যুষে পৃথিবীতে প্রবাহিত হয়ে আল্লাহর বান্দাদের কান্নাকাটি ও ক্ষমা প্রার্থনা সঙ্গে নিয়ে আল্লাহর দরবারে পৌঁছে দেয়।

হযরত আবুবকর কেতানী (র)-এর অন্তিম মুহর্তে জিজ্ঞেস করা হয়, কোন আমলের ফলে আল্লাহ আপনাকে এমন মর্যাদা দান করেন? তিনি বললেন, যদি আমার জীবনের শেষ মুহর্তে ঘনিয়ে না আসত, তাহলে আমি এ প্রশ্নের উত্তর দিতাম না। কিন্তু বিদায় নিচ্ছি বলে বলছি, আমি একটানা চল্লিশ বছর আমি আমার অন্তরের পাহারায় রয়েছি। আল্লাহ ছাড়া অন্য যা কিছু অন্তরে প্রবেশ করতে চাইত, তা সবই দূর করে দিয়েছি। এর ফলে, ক্রমে ক্রমে অবস্থা এমন পর্যায়ে পৌছে গিয়েছিল যে, আমার অন্তর আল্লাহ ব্যতীত অন্য যে কোন বস্তুকে একেবারে ভুলে গিয়েছিল।

আরও পড়ুনঃ  

* হযরত ইমাম শাফেয়ী (রাঃ) জীবনী

* হযরত ইমাম  আহমদ ইবনে হাম্বল (রাঃ) জীবনী

* হযরত আবু আলী শাকীক বলখী (রাঃ) জীবনী

হযরত হাতেম আসাম (রাঃ) জীবনী

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ